আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বিজিবির গুলিতে এক স্কুলছাত্রসহ তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সাড়ে ছয় বছর পর অবশেষে আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ঘটনার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক চোখ হারানো কলেজছাত্র মো. আবুল কাশেম। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
কী ঘটেছিল সেদিন…..
২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামের বাসিন্দারা বৈধভাবে কেনা গরু হাটে নেওয়ার পথে বিজিবি সদস্যরা গরুগুলো আটক করেন। গ্রামবাসীদের দাবি, গরুর কাগজ দেখানো হলেও বিজিবি তা উপেক্ষা করে গরু নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে প্রতিবাদ করলে বিজিবি সদস্যরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।
ঘটনাস্থলেই নিহত হন দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মো. নবাব (২৭), রুহিয়া গ্রামের মো. সাদেক (৩৫) এবং পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জয়নুল (১২)। আহত হন আরও অন্তত ১৮ জন।
তবে বিজিবির পক্ষ থেকে সেদিন জানানো হয়, ভারতীয় গরু পাচারকারীরা বিজিবির ওপর হামলা চালালে তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হন।
বিচারহীনতার দীর্ঘ পথ……..
ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি হলেও তার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। উল্টো ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধেই বিজিবির পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়।
মামলার বাদী আবুল কাশেম বলেন, “আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিলাম, কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলিবিদ্ধ হই। থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ নেয়নি। বরং বিজিবির মামলায় আমাকে দুইবার জেল খাটতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পরিবেশে ন্যায়বিচারের আশা জেগেছে বলেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।”
আদালতের নির্দেশ ও পরবর্তী পদক্ষেপ…..
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী বকুল বলেন, “দীর্ঘদিন ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। এখন মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় আশার আলো দেখছেন ভুক্তভোগীরা।”
মামলায় আসামি করা হয়েছে বেতনা বিওপির তৎকালীন নায়েক মো. হাবিবুল্লাহ, নায়েক মো. দেলোয়ার হোসেন, সিপাহী হাবিবুর রহমান, সিপাহী মুরসালিন, সিপাহী বায়রুল ইসলাম, নায়েক সুবেদার জিয়াউর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে।
হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাকারিয়া মন্ডল জানান, “ঘটনাটি পুরোনো। আদালতের নির্দেশ সংক্রান্ত কোনো কাগজ আমরা এখনও পাইনি।”
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির বর্তমান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজীম আহমেদ বলেন, “ঘটনাটি আমার যোগদানের আগের। এখনো দাপ্তরিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।”
সাড়ে ছয় বছর ধরে চাপা থাকা এক মর্মান্তিক ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে সুবিচারের আশা জেগেছে। এখন দৃষ্টি পিবিআইয়ের নিরপেক্ষ তদন্তের দিকে।