ডিবি’র তিন ওসির বদলি, আকস্মিক পরিবর্তনে সমাজে বিশৃঙ্খলার উত্থান ঘটে বেড়েছে অপরাধ

শেয়ার

গোলাম কিবরিয়া পলাশ, ব্যুরো : প্রধান ময়মনসিংহঃ
ময়মনসিংহে পরপর তিনজন ওসির বদলি ফাঁকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ পদটি, গত ৫ আগস্টের পর থেকে (ডিবি) তিনজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদলি হয়েছেন। বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে ওসির পদটি। ঘন ঘন ওসি বদলি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে জেলার পুলিশ সুপার কাজী আখতার-উল-আলম জানিয়েছেন, জনস্বার্থে ওসিদের বদলি করা হয়েছে।

গত ৯ আগস্ট ময়মনসিংহে জেলা ডিবির ওসি ফারুক হোসেনকে বদলি করা হয়। তাঁর স্থলে পদায়ন করা হয় শহিদুল ইসলামকে। তিনিও খুব বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেননি। তাঁকে বদলি করে গত ১ জানুয়ারি দায়িত্ব দেওয়া হয় আবুল হোসেনকে। গত ২৪ মার্চ আবুল হোসেনকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর নতুন করে কাউকে ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

এদিকে, ঘন ঘন ডিবির ওসি বদলি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সচেতন নাগরিক মহল বলছেন, একজন ওসি থানায় যোগদান করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে বদলি করা হলে কাজের অনেক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। নতুন কেউ এসে থানার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে কেটে যায় কয়েক মাস।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসররা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা এলাকায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা এখনো পূরণ হয়নি। ওসিরা স্থায়ী না হওয়ায় এ ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। চুরি-ছিনতাই-খুন যেন নিত্যদিনের ঘটনা। বিশেষ করে ছিনতাই বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। রাতে ও ভোরে চলাচল করতে মানুষ ভয় পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের ওয়েবসাইট সূত্রমতে, গত আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ২০৫টি ডাকাতি, দস্যুতা বা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ৪৬৪টি, আর খুনের মামলা হয়েছে দুই হাজার ২৩৭টি। এ সময় পর্যন্ত যদিও প্রকৃতপক্ষে এর সংখ্যা আরো বেশি। অনেক ভুক্তভোগীই অতিরিক্ত ঝামেলা এড়াতে পুলিশের শরণাপন্ন হতে চান না।

সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধ-প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে কোনো কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র রয়েছে কি-না, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অপরাধ করাচ্ছে অথবা অপরাধ দমনে পুলিশ ব্যর্থ কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, যখন একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় উত্থাপিত হয় তখন সে বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। পুলিশ এসব বিষয় মাথায় রেখে সবগুলো ঘটনার তদন্ত করছে। তবে অনেক ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়েছে। যারা কিশোর বয়সের। অপরাধীরা প্রতিদিন ধরা পড়ছে। জনমনে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের জনবল যা আছে তা দিয়ে জনসাধারণকে সাধ্যমতো সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।

জুলাই বিপ্লবে পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের ওপর সংক্ষুব্ধ। পুলিশ তার সক্ষমতা ও মনোবল হারিয়েছে। পুলিশের এ দুর্বলতার কারণে সুযোগসন্ধ্যানী গ্রুপ অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। অপরাধীরা অপরাধ করার আগে চিন্তা করে তার পার পাবে কি-না। যেহেতু এ সময়ে পুলিশ তাদের ক্যাপাসিটি হারিয়েছে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগাতে চাচ্ছে অপরাধীরা। আকস্মিক পরিবর্তন সমাজে বিশৃঙ্খলার উত্থান ঘটে। তবে পুলিশ যতক্ষণ না পর্যন্ত তার অরিজিনাল রুলস অনুযায়ী দায়িত্ব ও সক্ষমতায় ফিরে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত সুযোগসন্ধ্যানী চক্র অপরাধ করার চেষ্টা করবে। আর এ চেষ্টারই বাস্তব চিত্র আজকের অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। অভ্যুত্থানের পর পুলিশ থানা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় অপরাধ দমন কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছিল। নতুন সরকার ঢাকায় পুলিশের জনবলে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ডিএমপি কমিশনার পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, এখন অপরাধের ঘটনা নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। এ কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেশি তৈরি হচ্ছে। এ বছরের আগস্ট মাসে পুলিশি কার্যক্রম একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। এখনো পুলিশি কার্যক্রম পুরো স্বাভাবিক হয়নি। সাধারণ মানুষ বলছে, পুলিশের মনোবল পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ায় সাধারণ জনগণ পুলিশের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার-উল-আলম বলেন, পুলিশ সব সময় জনস্বার্থে কাজ করে। তাই জনস্বার্থ বিবেচনায় ওসিদের বদলি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

website counter