আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
জ্বীনের সোনার হাড়ি পেয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখে না পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর ব্যাপার। সেই স্বপ্ন পূরণে দিনরাত ইটভাটার ঢিবির মাটি খুঁড়ে চলেছেন সাধারণ মানুষ। সব বয়সের মানুষ যখন রাত-দিন সমান করে স্বর্ণের লোভে মাটি খুঁড়ে সারা দুনিয়া আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে। ঠিক তখনেই সেই স্বর্ণের পাহাড়ে
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা আসে। মুহুর্তেই ইটভাটার ঢিবির মাটি জুড়ে পুরো এলাকায় ঘিরে দেওয়া হয় লাল চিহ্নের ফ্লাগ দিয়ে। সরিয়ে দেওয়া হয় মানুষকে।
রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান শনিবার (২৫ মে)
রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশ দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলে তিনি জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘আরবি ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটায় মাটির স্তূপ খুঁড়ে সোনা পাওয়া যাচ্ছে—এমন খবরে স্থানীয় লোকজনসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গার অসংখ্য মানুষ বেশ কিছুদিন ধরে খুনতি, কোদাল, বাসিলা দিয়ে মাটি খুঁড়ে সোনার সন্ধান করছে। এতে যেকোনো সময় ঘটনাস্থলে মারামারি,খুন, জখমসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইটভাটা এলাকা ও আশপাশে ফৌজদারী কার্যবিধি
১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল, মহন্ত, আশামণিসহ আরও অনেকে বলেন, ভাটার মাটির স্তূপে সোনা পেয়েছেন কয়েকজন। কিন্তু কে পেয়েছেন এ কথা স্বীকার করছেন না কেউ। তাদের দাবি-‘অনেকেই পেয়েছেন ।’
জানা যায়, গেল এপ্রিলে হঠাৎ স্থানীয় এক ব্যক্তি তার ফেইসবুকে লিখেন আরবিবি নামে একটি ইটভাটার ইট প্রস্তুতের জন্য সংরক্ষিত ঢিবির মাটি খুঁড়লেই মিলছে সোনা। এমন খবরে কোদাল, খুনতি,শাবল, বসিলা নিয়ে দিন-রাত স্বর্ণের খোঁজে
ইটভাটার মাটি খুঁড়ার প্রতিযোগীতায় নামে স্থানীয়রাসহ আশপাশ জেলা উপজেলার উৎসুক জনতা।
এক মাস ধরে এমন হুলুস্থুল কাণ্ড চলছিলো ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাজোর ইউনিয়নের কাতিহার এলাকার ‘আরবি ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটায়।
ইট ভাটার মালিক হলেন ওই এলাকার রুহুল আমিন।
১৪৪ ধারা জারির পর থেকেই স্বর্ণের সন্ধানে আসা মানুষেরা তাড়াহুড়ো করে এলাকা ছাড়েন। মুহূর্তেই পুলিশ পুরো এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেন। বর্তমানে জনশূন্য ইটভাটার আশেপাশ।
বর্তমানে আরবিবি ইটভাটার মাটির ঢিবিতে হাজারো লোকজনের স্বর্ণ খোঁজার স্থান ঘিরে রেখেছে প্রশাসন। সোমবার (২৭ মে) দুপুরে গিয়ে এ দৃশ্যের দেখা মেলে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) মোহা. রেজাউল হক জানান,
১৪৪ ধারা জারির পর মাটি খননের সন্ধানে যে আসছে, তাকেই আইনের আওতায় নেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কাতিহার বাজার প্রবেশ করতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পাহারায় রয়েছেন। একইভাবে ইটভাটার মাটির বিপরীত দিকে কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যে দায়িত্ব পালন করছেন। মাটির স্তূপে লাল কাপড়ের নিশানা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। একজন গ্রাম পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ইটভাটার একটু সামনেই রাজোর মোড় এলাকায় রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) মোহা. রেজাউল হকের তদারকিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যেরা পাহারায় রয়েছেন।
ওই ইটভাটার ম্যানেজার আসাদুজ্জামান লিটনের অভিযোগ, ভাটা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সোনা সোনা বলে এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই মেলেনি। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ হয়েছে।
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, মাস খানেক ধরে মানুষ সেখানে উপস্থিত হয়ে মাটি খুড়তে থাকে । যেহেতু সেখানে মাটি খোড়ার জন্য কোদাল, খুনতি, শাবল, বসিলা সরঞ্জামাদি নিয়ে দলবদ্ধ হচ্ছে। সে কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ইট ভাটার আশপাশ এলাকা ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই ইটভাটার ওই মাটির স্তূপে সাধারণ মানুষকে ভিড়তে দেওয়া হবে না
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ঠাকুরগাঁও সম্পূর্ণ বন্যামুক্ত একটা জেলা। যেখানে মাটিতেই সোনা ফলে সেখানে মনোযোগ দিয়েই অনেকে গাড়ি-বাড়ি, সোনাদানার মালিক হয়েছেন। সোনার হরিণের পেছনে তাই এই ছোটাছুটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। পরিশ্রম, বিদ্যা-বুদ্ধি ও মেধা নিয়োগ করেই সম্পদ অর্জন করতে হবে।’