ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুর নির্দেশনা দিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

শেয়ার

আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:

ঢাকা সেনানিবাসের সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তরের মহা-পরিচালককে ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দরটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণলায়।

৪৪ বছর ধরে পরিত্যক্ত থাকা ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু করার জন্য আইনী লড়াই শুরু করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট
মোঃ মেহেদী হাসান শুভ ।

ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরচালুর জন্য ঢাকা সেনানিবাসের সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তর হতে এক আদেশ জারি করা হয়েছে। গত (২৬ জুন) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাহিদা পারভীন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দরটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

এর আগে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মেহেদী হাসান শুভ গত ৩১ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে, আইন মন্ত্রণালয়ে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে, বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষকে এবং ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের বরাবর ১০টি দপ্তরে রিপ্রেজেন্টেশন দাখিল করেন এবং পরবর্তীতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর প্রেক্ষাপটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ আদেশ জারি করেন।

অ্যাড. মেহেদী হাসান শুভ বলেন, “বিমানবন্দরটি চালু করতে ইতোমধ্যে আমি আইনি লড়াই শুরু করেছি এবং এই লড়াই ততক্ষণ চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত বিমানবন্দরটি চালু না হয়।

প্রাথমিকভাবে আইনগত পদক্ষেপের কারণে যেহেতু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সাড়া দিয়েছেন, বিধায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুকরণে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে বিমানবন্দর চালুকরন প্রসঙ্গে জনস্বার্থে দায়েরকৃত রীট পিটিশন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে, শুনানির পরে সেখান থেকেও নির্দেশনা আসবে অবশ্যই ।

সরকারকে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে যেসব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য বলা হয় সেগুলো হল- ১) ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে কী কী প্রয়োজন, ২) বিমানবন্দরটি চালু না থাকার ফলে এই এলাকার ৪৫ লক্ষ মানুষ, ব্যবসা, বাণিজ্য ও উদ্যোক্তাদের উপর কিরূপ প্রভাব পড়ছে, ৩) নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশ ক্রসবর্ডার বাণিজ্য-পর্যটনের সম্ভাব্যতা, এবং ৪) এই এলাকার ভৌগলিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় এখানকার মানুষ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবন্দরের সম্ভাব্য ব্যবহার বিষয়ে পতিবেদন প্রস্তুত ও প্রকাশ করা।

অ্যাড. মেহেদী হাসান শুভ আরও বলেন, “অতীতে বিভিন্ন সময় সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা এই বিমাবন্দরটি চালুর কথা ফলাও করে প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি, দৃশ্যমান বা বাস্তব কোন পদক্ষেপও নেন নি।”

তিনি বলেন, “ ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কার্যকারণ রয়েছে।
এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হলেও বিমানবন্দরটি চালু করা একান্ত প্রয়োজন। ১৯৪০ সালে ব্রিটিশরা যখন এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে তখন এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। বর্তমানেও এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে তখন এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহার করার আবশ্যকতা রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বিমানযাত্রীর অভাবে বিমাবন্দরটি বন্ধ আছে বলে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই যুক্তি সঠিক নয়। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে বিমানযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সৈয়দপুর বিমাবন্দরের অধিকাংশ যাত্রী ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের। প্রতিদিন ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় থেকে প্রায় ৯০-১০০ জন যাত্রী বিমানে যাতায়াত করেন। ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর প্রায় ১০০ কি.মি. দূরে, যেতে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা সময় লাগে, সৈয়দপুর হয়ে বিমানে ঢাকায় যাওয়ার যেই সময়, খরচ ও কষ্ট হয় তাতে রেলওয়েতে যাওয়া অনেক সহজসাধ্য। ”

বর্তমানে হাজার হাজার ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগ গড়ে উঠেছে। এই বিমানবন্দরটি ঠাকুরগাঁও সদর, রুহিয়া, শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গি, হরিপুর, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুর ও নীলফামারীর কিছু এলাকার প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে। বিমানবন্দরটির অভাবে এই এলাকায় ভারী শিল্প, কল-কারখানা গড়ে উঠছে না, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না, ৪৫ লক্ষ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। বিমানবন্দরটি চালু হলে এই এলাকার উন্নতির জন্য আর কিছু লাগবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

website counter