বেহাল সড়কে চরম ভোগান্তি, বারবার আশ্বাসেও মেলে না প্রতিকার দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চরাঞ্চলের

শেয়ার

গোলাম কিবরিয়া পলাশ, ময়মনসিংহঃ
শম্ভুগঞ্জ-পরানগঞ্জ বাজার সড়কের এখন বেহালদশা। সড়কের বেশির ভাগ স্থানেই কাপেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এতে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। বেহাল সড়কে চরম ভোগান্তি, বারবার আশ্বাসেও মেলে না প্রতিকার। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি শিগগিরই সংস্কারের আশ্বাস এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা পুরো সড়ক জুড়ে। যানবাহন চলছে হেলেদুলে। আবার সড়কের কোথাও রয়েছে কাঁদা-পানির দখলে। বৃষ্টির পানি জমে সড়কের একেকটি গর্ত যেন পরিণত হয়েছে ছোট-খাটো ডোবায়। এমন বেহাল দশা ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ টু পরানগঞ্জ সড়কের। যদিও বিগত সরকার আমলে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও। চর হরিপুর কালা কুড়ের পাড় থেকে চর খরিচা হৃদয় মোড় পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কটির কাজ থেমে থাকে।

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি এখন যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়া শম্ভুগঞ্জ থেকে পরানগঞ্জ বাজারের সড়কটির মাঝখানে ৪ কিলোমিটারের সড়কটি এখন পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সড়কের বেহালদশায় চরম ভোগান্তিতে যাতায়াতকারীরা।

স্থানীয়রা জানান, সড়কটির দুপাশে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছোট-ছোট ৬টি বাজার। এ ছাড়াও বৃহত্তর জয় বাংলা বাজার ও চর খরিচা বাজারকে ঘিরে জেলার সদর ছাড়াও তারাকান্দা ও ফুলপুরের কয়েকটি যোগাযোগের মাধ্যমও এ সড়কটি। অথচ সংস্কার না হওয়া সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

মাটিবাহী ট্রাক-ডাম্পট্রাক মাছবাহী ট্রাক সড়কে চলাচল করায় ধুলোবালি আর বর্ষা মৌসুমে কাঁদাপানিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। একজন গুরুতর রোগী কিংবা প্রসূতি মা-বোনদের নিয়ে হাসপাতালে যেতে বেগ পেতে হয়, এতে বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি। মাটিবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধসহ দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা বিএনপি নেতা মো. আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, সড়কটির এমন অবস্থা, কোনো লোক অসুস্থ হলে যে হাসপাতাল নিয়ে যাব, সেটিও এখন দুষ্কর। সড়কের মাঝে এমন গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, যেন মাছ চাষ করা যাবে। সোজা কথা সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমান লিখন বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের এই সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রাস্তার যে বেহালদশা এতে করে আমাদের চলাফেরা করতে খুবই কষ্ট হয়। তাছাড়া অসুস্থ রোগীরা এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সিরতা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আছলাম আলী খোকন বলেন, সড়কের বেহালদশার কারণে দুদিন আগে আমি নিজেও মোটরবাইক এক্সিডেন্ট করে আহত হই। প্রতিনিয়তই এ সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। আশা রাখছি দ্রুত এই সড়কটি সংস্কারে সরকার পদক্ষেপ নেবেন, না হলে এই জনপদের মানুষ খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়বে।’

বিএনপি নেতা, চর খরিচার স্থানীয় বাসিন্দা আল মামুন বলেন, ‘সড়কটি ভাঙাচুরার কারণে আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীদের কলেজে যেতে খুবই কষ্ট হয়। গাড়ির ঝাঁকুনিতে শিক্ষার্থীদের শরীরে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলেও জানতে পারি। একদিন কলেজে গেলে পরের দিন আর কলেজে যেতে পারে না, শরীরে ক্লান্তিবোধ হয়। এতে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে তাদের।’

জামিয়া মাহমুদিয়া চর খরিচার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু সাঈদ বলেন, ‘সড়কের বেহালদশার কারণে আমাদের যাতায়াতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। গত কওমী শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নির্ধারিত সময়ে আমরা পরীক্ষা কক্ষে উপস্থিত হতে পারি নাই। এতে নানা সমস্যা পড়তে হয় আমাদের।’ জামিয়া ইউসুফিয়া লিল বানাত এর প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউসুফ আব্দুল্লাহ সহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভাঙা সড়কে পণ্য নিয়ে কোনো মালবাহী ট্রাক-পিকআপভ্যান আসতে চায় না। আসলেও কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের।

এ দিকে চালকরা জানালেন, এ সড়কে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে যানবাহন। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। ট্রাকচালক হারুন ও সিএনজি চালক লাল চাঁন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সড়কে যে পরিস্থিতি, তাতে আমাদের গাড়ির চাকাও শেষ মাজাও শেষ। যে পরিমাণ রাস্তা ভাঙা এটি দ্রুত মেরামতের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

অটোরিকশা চালক আল আমিন ও মাজহারুল ইসলাম বলেন, রাস্তা খারাপের কারণে এই সড়কে গাড়ি চালাতে আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়। প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। যা ইনকাম করি, তা গাড়ির পিছনেই চলে যায়। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।

স্থানীয় লোকজন সহ জামিয়া নূর হোসেন মহিলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতী নূরে আলম সিদ্দিকী আক্ষেপ করে জানান, সড়কে মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডি বিভাগকে জানানো হলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সড়কটির নিউজ বার বার প্রকাশ করা হলেও কোন প্রতিকার দেখতে পায়নি।

সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে এলজিইডি’র ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সড়কটি মেরামতের জন্য প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হলে কাজ শুরুও হয়ে ছিল। শম্ভুগঞ্জ থেকে হরিপুর কুরড়ের পাড় থেকে চর খরিচা হৃদয় মোড় পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কটির কাজ না করার জন্য টিকাদার অস্বীকৃতি জানাই। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সড়কটি সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হবেও বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

website counter