ব্রিজ দিয়া পার অইলে জীবনডা সার্থক ওইতো’

শেয়ার

গোলাম কিবরিয়া পলাশ, ব্যুরো প্রধান ময়মনসিংহঃ
ময়মনসিংহ মহানগরীর কাচারিঘাটে সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের।
প্রতিদিন নৌকায় করে পারাপার হয় প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
ঝড়বৃষ্টির দিনে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে কয়েক গুণ।
কাচারিঘাটে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে।

ময়মনসিংহ মহানগরীর কাচারিঘাট এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে সেতু না থাকায় পারাপারে এখনো ভরসা নৌকা। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় পারাপারে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহ মহানগরীর কাচারিঘাট এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে সেতু না থাকায় পারাপারে এখনো ভরসা নৌকা। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় পারাপারে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘২০১৪ সাল থাইক্যা কাচারিঘাটে একটা ব্রিজ বানানোর জন্য নেতা-প্রশাসনের কাছে দৌড়াদৌড়ি করতাছি। সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্যারও বলছিলেন, ব্রিজডা কইরা দিবেন। কিন্তু কেউ ব্রিজডা আর কইরা দিলেন না। ব্রিজডা অইলে এর ওপর দিয়া পার হইয়া মইরা গেলেও জীবনডা সার্থক ওইতো।’

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন চরগোবিন্দপুর গ্রামের ৯৪ বছর বয়সী কৃষক আইয়ুব আলী খান। সম্প্রতি ময়মনসিংহ মহানগরীর কাচারিঘাট এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদপাড়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন এদিক দিয়া চরাঞ্চলের ২০-৩০ হাজার মানুষ যাওয়া-আসা করে। নাউ দিয়ে পার হইতে গিয়া অনেক সময় দুর্ঘটনার মধ্যে পড়তে হয়। বিশেষ কইরা ছাত্রছাত্রীদের সমস্যাডা বেশি ওয়। এটা নিয়ে নেতা ও প্রশাসনের কাছে গিয়া কোনো লাভ ওইতেছে না।’

ব্রহ্মপুত্র নদের কাচারিঘাট দিয়ে চরাঞ্চলের দুই লক্ষাধিক মানুষের চলাচল। প্রতিদিন নৌকায় করে পারাপার হন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত মানুষ পারাপারে চারটি নৌকা দুই শিফটে চলাচল করছে। ঝড়বৃষ্টির দিনে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে কয়েকগুণ। স্বাধীনতার পর থেকে কাচারিঘাট এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সেতুটি নির্মাণ হলে শহরের সঙ্গে চরবাসীর যোগাযোগের যেমন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে; তেমনি গতিশীল হবে অর্থনীতি—এমনটিই মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘কাচারিঘাটে একটি ব্রিজ হোক; সেই দাবিটা দীর্ঘদিন ধরে আমরাও করে আসছি। কারণ ব্রিজটা হলে চরাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে শহরের মানুষের সম্পর্ক আরও জোরালো হবে। অর্থনৈতিকভাবে চরাঞ্চল আরও সমৃদ্ধ হবে।’

মহানগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চরগোবিন্দপুর গ্রামের আনিসুজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘একটা ব্রিজের কারণে চরাঞ্চলের মানুষ অবহেলিত। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কর্মের কারণে ঝুঁকি নিয়ে শহরে যাতায়াত করে। আমরা চাই সরকার যেন ব্রিজটি করার জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেয়।’

একই ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, কাচারিঘাট থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর পাটগুদাম চীন মৈত্রী সেতু রয়েছে। এখান থেকে গিয়ে সেই সেতু দিয়ে পার হতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক দীর্ঘ যানজটে বসে থাকতে হয়। কাচারিঘাট দিয়ে ব্রিজ হলে পণ্য আনা নেওয়ায় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক উপকারে আসত।

চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন, ‘প্রতিদিন নৌকায় পার হয়ে শহরের মেসে রান্না করতে যাই। সকালে অনেক সময় নৌকার জন্য বসে থাকতে হয়। আইতে-যাইতে পাঁচ টাকা করে ১০ টাকা খরচ হয়। ব্রিজ হলে দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি যাতায়াতে খরচও হতো না।’

কাচারিঘাটের ইজারাদারের সহযোগী হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন কাচারিঘাট দিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী হবে ৪ হাজার। ৪২ বছর ধরে এখানে আমি কাজ করছি। দীর্ঘদিন ধরে শুনছি, ব্রিজটা হবে। এটি হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।’

ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, কাচারিঘাটে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা পর্যবেক্ষণের কাজ চলছে। সেতু হলে শুধু যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতি হবে তা-ই নয়; কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্য সহজেই শহরে এনে ন্যায্য দামে বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

website counter