ঠাকুরগাঁওয়ে সাড়ে ৬ কোটি টাকার ব্রিজে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

শেয়ার

আনোয়ার হোসেন আকাশ,
(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ে নদীতে তলিয়ে গেছে ব্রিজের এক পাশের সংযোগ সড়কের দেয়াল। গত তিন মাস ধরে ব্রিজটি পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়। ফলে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটি মানুষের কোনো উপকারে আসছে না। উল্টো ব্রিজের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্থানীয় জনগণ।

সংযোগ সড়কের বেহাল দশা নিয়ে স্থানীয়রা একাধিকবার এলজিইডিকে অবগত করলেও আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। রাজাগাঁও, আসান নগর ও খড়িবাড়ি এলাকার অধিকাংশ মানুষই কৃষক।

২০১৯ সালে সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের আসান নগরের খড়িবাড়ি এলাকায় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের জন্য টাঙ্গন নদীর ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২৫০০.০০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিএসসি গার্ডার ব্রিজটি নির্মাণ করেন। সাড়ে ৬ কোটি টাকার ব্যয়ে কাজটি পান স্থানীয় মো. জামাল হোসেন নামে এক ঠিকাদার। গত বছরের ২রা মার্চ ব্রিজটি উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলী সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ সেন।

ব্রিজটি নির্মাণের পর থেকেই কয়েকবার সড়কের দেয়াল ও ব্লকসহ নদীতে ধসে যায়। স্থানীয়রা তৎক্ষণিকভাবে বালুর বস্তা দিয়ে সাময়িক সংস্কার করে ধস ঠেকায়। কিন্তু এবারের বর্ষা শুরু হওয়া মাত্রই আবারো ব্রিজটির পশ্চিম তীরের সড়কের একটি অংশ ব্লক সহ নদীতে তলিয়ে যায়। এতে সড়ক ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এভাবে কয়দিন থাকার পর স্থানীয়রা বালুর বস্তা ও বাঁশ দিয়ে সংস্কার করে চলাচলের ব্যবস্থা করেন। তবে মানুষ ছাড়া বড় ধরণের কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না এই ব্রিজ দিয়ে।

এলাকাবাসীরা জানায়, এ ব্রিজ পার হয়ে কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। আমাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক। এলাকার কৃষিপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আনা-নেওয়া করতে প্রতিদিন শতাধিক মাহিন্দ্রা-পাওয়ার ট্রিলার গাড়ি চলাচল করে। তিন মাস আগে ব্রিজটির এক পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে ধসে যায়। এরপর থেকে ব্রিজের ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি।

গাড়ি চালক হেলাল বলেন, গত তিন মাস ধরেই একটু একটু করে সড়কের দেয়াল পানির নিচে ধসে যাচ্ছিল। কয়েক দিন আগে যাত্রী নিয়ে এসে দেখলাম সড়কের অর্ধকে অংশই ভেঙে গেছে। পরে যাত্রী নামিয়ে গাড়ি পার করেছি। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা না নিলে আমরা যানবাহন চালাতে পারবো না।

স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান আলী বলেন, কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য এক বছর আগে খড়িবাড়ি স্কুলের পশ্চিমে টাঙ্গন নদীর ওপর সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করে সরকার। কিন্তু কাজটিতে ভয়ঙ্করভাবে দুর্নীতি করা হয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় নির্মাণের বছর পার হতে না হতেই সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে গেছে। গত ৩ মাস ধরে ভাঙা সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করছে কিন্তু এলজিইডির কেউ এনিয়ে কথা বলে না বা শুনে না।

স্থানীয় কৃষক মাহিদুল ও আবুল হোসেন বলেন, ব্রিজ হওয়ার পর মাথায় করে নিয়ে বাজারে ফসল বিক্রি করতে হয়নি। ভ্যান, নসিমন ও গাড়িতে করে কৃষিপণ্য বাজারজাত করেছি। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ব্রিজের এক পাশের সড়ক ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই বর্তমানে ফসল মাথায় করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের। কোটি টাকার ব্রিজটি এখন আমাদের কোনো কাজে লাগছে না। আমরা ব্রিজের এক পাশের সংযোগ সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস বলেন, ব্রিজটির এক পাশের সংযোগ সড়ক সংস্কার জরুরি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সংস্কার করার জন্য। ইতোমধ্যে সংস্কারের জন্য ঢাকায় এস্টিমেট পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

website counter