সাংবাদিককে টাকা অফার করে বললেন, ‘মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে না’
আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর ফরহাদ আকন্দের বিরুদ্ধে উঠেছে অভিযোগের পাহাড়। লাভবান হওয়া ছাড়া কোনো অভিযান পরিচালনা করেন না তিনি। অফিসের তিন সদস্যকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বলয়।
তাদের মাধ্যমে নগদ ও অনলাইন পেমেন্টে হাতিয়ে নেন লাখ টাকা। মাদক দিয়ে মামলায় ফাঁসানো, টাকা নিয়ে আসামিকে ছেড়ে দেওয়া, টাকা নিয়েও মামলা দেওয়া, এজাহার থেকে নাম কেটে দেওয়াসহ প্রতি মাসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গত তিন বছর ধরে একই কর্মস্থলে রয়েছেন ফরহাদ। এর আগে সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত থাকলেও তার বদলির পর নিয়মিত দায়িত্ব পাননি কোনো কর্মকর্তা। পাশের জেলা নীলফামারীর কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিলেও নিয়মিত অফিসে আসেন না তিনি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজস্ব বলয় গড়ে অনিয়মের কারখানা তৈরি করেছেন তিনি।
তেমনি এক ভুক্তভোগী ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের মিলন নগরের বাসিন্দা রঞ্জু। ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। আচমকা তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে আকন্দ টিম। ঘটনা না বোঝার আগে কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে সেখান থেকে আটক করে আনা হয়। পরিবারের সদস্যরা জানতে চাইলে তাদের সঙ্গে করা হয় দুর্ব্যবহার।
রঞ্জুকে গাড়িতে ওঠানোর পর আড়াই লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন আকন্দ। টাকা দেওয়ার অপারগতা জানালে তাকে নিয়ে চলে যাওয়া হয় অফিসে। তারপরে আকন্দের সহযোগী কনস্টেবল বাধন, খালেক ও ইউনুসের মাধ্যমে শুরু হয় দর কষাকষি। সেখানে ডেকে নেওয়া হয় রঞ্জুর ছোট ভাই শাকিলকে। টাকা দিলে হালকা মামলার প্রস্তাব দেন তারা। দাবি করা হয় ১ লাখ টাকা। ভাইয়ের মাদকের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান শাকিল। তাতেও ক্ষান্ত হননি আকন্দ বলয়। নানা ধরনের ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে শুরু করেন চাপ।
পরে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও কনস্টেবল বাধন তার মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আরও ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। টাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তাদের দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন আকন্দ।
রঞ্জুর ভাই শাকিল বলেন, আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে আমি জানতে পারি। পরে তাদের অফিসে গেলে তারা টাকা দাবি করে আমার কাছে। আমরা অনেক গরিব, টাকা কোথায় পাব। অনেক মিনতি করি কিন্তু আকন্দ কোনো কথা শোনে না। পরে আমি কোনোভাবে টাকা ম্যানেজ করে নগদ ৩০ হাজার টাকা দিই ও কনস্টেবল বাধনের নম্বরে ৫ হাজার টাকা দিই।
ভুক্তভোগী রঞ্জু ইসলাম বলেন, আমাকে শুধু টাকার জন্য ফাঁসানো হয়েছে। এলাকা, পরিবারের কাছে আমার সম্মানহানি করা হলো। আমি তো মাদক ব্যবসায়ী না, তারপরও আমার সঙ্গে অন্যায় করা হলো। আমি এটার বিচার চাই।
শুধু একটি ঘটনাই না, এমন নানা ঘটনার মূল হোতা ফরহাদ আকন্দ। জেলার বালিয়াডাঙ্গী ও পীরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তিতেও অর্থ নেন তিনি। কিছুদিন আগে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সহকারী পরিচালকের সিল ও সই জালিয়াতি করে মামলার চার্জশিট থেকে পুলিশ কনস্টেবল মোশাররফ হোসেনের নাম বাদ দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও জেলায় অভিযান পরিচালনাকালে মাদক পেলেও টাকা, না পেলেও টাকা ও বাড়িতে থাকা নগদ অর্থ নিয়ে আসেন তিনি।
আরেক ভুক্তভোগী লাকি আক্তার বলেন, আকন্দ উনার বাহিনী নিয়ে প্রায় আমার বাসায় রেট দেয়। প্রায়ই তারা আমাদের বাসায় এসে টাকা নিয়ে যায়।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে আনীত অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যা আখ্যা দেন ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর ফরহাদ আকন্দ। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে না স্বীকার করে প্রতিবেদন না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। প্রতিবেদনটি প্রচার না করার জন্য খামে করে প্রতিবেদককে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত) মোহাম্মদ শরীফ উদ্দীন বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।