আনোয়ার হোসেন আকাশ,
(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলা এবং হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে দুই সাংবাদিক ও ৩৫ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর নামে মামলা করা হয়েছে।
মামলায় বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি পার্থ সারথী দাস ও দেশ টেলিভিশন-আমাদের সময় পত্রিকার প্রতিনিধি শাকিল আহমেদ ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত, পৌর যুবলীগের সভাপতি আমির হোসেন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর দত্ত, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রয়েল বড়ুয়া, পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাইয়ুম চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।
বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থী মো. মামুন ইসলাম ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিত্যানন্দ সরকারের আদালত একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার বাদী মো: মামুন ইসলাম (১৯) সদর উপজেলার দৌলতপুর সিঙ্গিয়া গ্রামের মো. তাজেল এর ছেলে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর, ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা রয়েল বড়ুয়া, ঠাকুরগাঁও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দ্রৌপদী দেবী আগরওয়ালার ছেলে ও জেলা যুবলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রাজীব পোদ্দার শশী, সজীব দত্ত, ল্যাংড়া সাদ্দাম, মুন্সিপাড়ার ফরহাদ, আতাউর রহমান, পূর্ব গোয়ালপাড়ার সিদ্দিক, যুবলীগ নেতা আমির হোসেন রুবেল, আট-গ্যালারি এলাকার জাকারিয়া প্রমানিক, আশ্রম পাড়ার খোকন চৌধুরী, টেংগাঁ বাবু, পশ্চিম মুন্সিপাড়ার এলাকার বাবুর্চি রানা, শিল্পকলার এলাকার তনু, আশ্রম পাড়ার মিরাজ ইসলাম, মুন্সিপাড়ার রায়হান ইসলাম, মামুস রানা, ডিসিবস্তি এলাকার সোহাগ ইসলাম, ভুল্লী কুমার এলাকার সরকার আসাদুজ্জামান, শাসলাপিয়ালা এলাকার তাজউদ্দীন, আশ্রমপাড়ার উৎপল গুহ ঠাকুরতা, মুন্সিপাড়ার মিন্টু, রানা ইসলাম, জমি দাস, সুয়েল, বাপ্পি, কলেজপাড়ার ইকবাল, বাপ্পী, দুওসুও ইউনিয়নের নোমান (অভি) শ্রী শচীন বর্মণ ও ভুল্লীর শাসলাপিয়ালা এলাকার রফিক মিয়া।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৪ আগস্ট ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসামিরা লাঠিসোঁটা, লোহার রড, ককটেল, হাতবোমা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের ওপর হামরা চালান। ছাত্রদের প্রতিহত করতে ককটেল ও হাতবোমা ছোড়েন। বেলা আড়াইটার দিকে মামুন ইসলাম শহরের আর্টগ্যালারি মোড়ে পৌঁছালে আসামিরা তাঁকে ঘিরে ফেলে ককটেল ও হাতবোমা ফাটান। পরে আসামিরা রামদা, চাইনিজ কুড়াল ও পিস্তল দিয়ে মামুনকে ভয়ভীতি দেখান। আসামি মো. সিদ্দিক তাঁর প্যান্টের পকেট থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। তাজউদ্দিন নামে আরেক আসামি রামদা দিয়ে মামুনের মাথায় কোপ দেন। আসামি ফরহাদ চাইনিজ কুড়াল দিয়ে মামুনের পায়ে আঘাত করেন। ইকবাল লোহার রড দিয়ে বুকের পাঁজরে আঘাত করলে পাজরের হাড় ভেঙে যায়। পরে মামুনকে আসামিরা সমীর দত্তের চেম্বারে নিয়ে গিয়ে মামুনের বাবার কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মামুনের বাবা ৩০ হাজার টাকা নিয়ে এলে আসামিরা তাঁর কাছ থেকে মামলা না করার শর্তে ফাঁকা নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নেন। পরে তাঁরা মামুনকে ছেড়ে দেন।
এব্যাপারে মামলার বাদী মামুন ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
এই মামলায় যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি পার্থ সারথি দাশকে ৩০ নম্বর আসামি ও দেশ টেলিভিশনের প্রতিনিধি শাকিল আহমেদকে ৩৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
মামলা প্রসঙ্গে পার্থ সারথি দাশ বলেন, ‘আমি সাংবাদিকতা করি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমরা সব সময় ছাত্রদের পাশে থেকে সমর্থন দিয়ে এসেছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলা ও আন্দোলনের এক ছাত্রকে মারধর করার পর অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো মামলায় নিজের নাম দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি।’
শাকিল আহমেদ বলেন, ‘মামুন ইসলাম নামের ওই শিক্ষার্থী কেন আমার বিরুদ্ধে এমন একটি মামলা করলেন, তা বুঝে উঠতে পারছি না। মামলার এজাহারে তাঁর মুঠোফোন নম্বরও নেই যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করব।’
রাজনৈতিক এই মামলায় দুই সাংবাদিকের নাম দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক মহল।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবি এম ফিরোজ ওয়াহিদ জানান, এখন পর্যন্ত মামলার কাগজপত্র হাতে পাইনি। পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।