আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি;
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। শনিবার সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ করেন।
সনাতনী শিক্ষার্থী ঐক্য, সুশীল সমাজের নাগরিক ও রাণীশংকৈলের সকল হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংগঠনের
ব্যানারে ওই বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
এসময় রাণীশংকৈলের সকল হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংগঠন ও সনাতনী শিক্ষার্থী ঐক্য এবং সুশীল সমাজের নাগরিকরা
একাত্মতা প্রকাশ করেন।
রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ শহীদ মিনারের সামনে তাঁরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। মানববন্ধন শেষে থেকে মিছিল নিয়ে পুরো রাণীশংকৈল পৌরসভা এলাকা প্রদক্ষিণ করেন তাঁরা।
দেশের অধিকাংশ জেলার বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হিন্দু মা–বোন–ভাইদের নির্যাতন এবং হত্যার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় সচেতন সনাতনী নাগরিক। তাতে অভিযোগ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। সনাতন সম্প্রদায়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা, হিন্দু মা–বোনদের লাঞ্ছিত করা এবং দেশছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
তারা এই সঙ্কটের দ্রুত সমাধান দাবি করেন।
তাদের পক্ষ থেকে মানববন্ধনে বিভিন্ন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সুষ্ঠু বিচারের জন্য সনাতন সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া ও পুনর্বাসন করা, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।
এসময় রাণীশংকৈল পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ছবি কান্ত দেব জানান, ‘প্রত্যেকটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর যেভাবে অত্যাচার নিপীড়নসহ মন্দির ভাঙচুর করা হয়, এটার প্রতিবাদ জানানোর জন্যই আমরা আজকে এখানে সবাই একত্রিত হয়েছি। ’
পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাধন কুমার বসাক বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এতে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। আমরা আশা করবো দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান চাই। ’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন রাণীশংকৈলে উপজেলা নিবার্হি কমকর্তা (ইউএনও) রাকিবুল হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেল ফারুক হোসেন, ক্যাপ্টেন মুহতাশিন, হিন্দু- বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রাণ গোবিন্দ সাহা বাচ্চু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দেশব্যাপী আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ্য করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় লুটপাট ও ডাকাতির মতো ঘটনায় ছাত্রজনতা এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে কাজ করতে দেখা যায়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ পুনরায় নিজ নিজ থানাগুলোতে ফিরতে শুরু করেছে।