আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি;
বাড়ি ঘরে হামলা ভাঙচুর ও নির্যাতনের ভয়ে ঠাকুরগাঁও জগদল সীমান্ত পাড়ি দিতে হাজার সংখ্যালঘু ঘর ছেড়েছে নাগর নদীর পাড়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। আর ফাঁকা গুলি করে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের নিজ বাড়িতে ফেরানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
গত সোমবার সদ্য পদত্যাগকৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর পরই শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সহ সাধারণ মানুষের বিজয়োল্লাস। মুহূর্তের মধ্যেই এ বিজয়োল্লাস ছড়িয়ে পরে পুরো দেশে। সারা দেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিজয়োল্লাসের পাশাপাশি হামলা ও ভাঙচুর করা হয় রাস্ট্রীয় স্থাপনা ও আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস, সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন, লুটপাট করে করা হয় ঘর ছাড়া।
সোমবার বিকেলে থেকে জেলার রানীশংকৈল, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী হরিপুর উপজেলার বেশকয়েকটি ইউনিয়নে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতন ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘুদের বসত বাড়িতে ভাঙচুর ও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
এসময় হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল, টাকা পয়সাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।
সুবোধ রায় নামে এক ব্যক্তি জানান, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হঠাৎ করে লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুর শুরু করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তাঁরা আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়ে যায়। আমাদেরকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় তারা। আমরা অনেক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
এমতাবস্থায় তারা তাদের জীবন রক্ষার্থে বুধবার (৭আগস্ট) সকাল থেকেই দেশত্যাগের জন্য রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের জগদল এলাকার ৩৭৫ নম্বর সীমানা পিলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী নদীর পাড়ে হাজার হাজার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন।
নির্যাতনের স্বীকার কয়েকজন জানান, আমাদের উপরে গতকাল হামলা হয়েছে। রাতে বাড়ি-ঘরে দোকান পাট হামলা করা সব লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। আর কিছু দোকানে আগুন দিয়েছে। কারও কারও ঘরের বিভিন্ন মালামাল, হাঁস মুরগি গরু ছাগল নিয়ে গেছে। এলাকায় অনেক বেশি আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাই প্রাণে বাঁচতে সবকিছু ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
অন্যদিকে বুধবার বিকেলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজামখোর ইউনিয়নে দেখা যায়, হাজারো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন পরিবার নিয়ে নদী পাড় হয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য জড়ো হতে শুরু করেন।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান নামপ্রকাশের অনিচ্ছুক জানায়, সোমবার দুপুর থেকেই ওইসব গ্রামে হামলা, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। এমন হামলা ও ভাঙচুরের জন্য এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অনেক আতঙ্কিত।
তাই নাগর নদী পাড় হয়ে ভারতে চলে যেতে শুরু করেছেন অনেকেই। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নদী পাড় হয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে।
তারা আরো বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন কারীদের বিজয় হয়েছে। দেশ এখন সেনাবাহিনীর হাতে। কিছু দুষ্কৃতকারী এখন ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা যজ্ঞ চালাচ্ছে।
দেশের সম্পদ রক্ষার দ্বায়িত্ব আমাদের সকলের৷ এমন পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে জানান তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, কোন অন্যায় সহ্য করা হবে না। যারাই দূবৃত্তয়ান করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এছাড়াও যে পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস
দিয়েছেন তিনি ।