আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি :
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ভেলাজান আনছারিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশির ভাগ প্রার্থী প্রবেশপত্র না পেয়ে এই পরিক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এতে মোট প্রার্থী ছিল ৩১ জন, এর মধ্যে পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেন ৮ জন।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে এ নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান আনছারিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য ২০২২সালে মাদ্রাসা কমিটি সিন্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী একই বছরের ২সেপ্টেম্বর স্থানীয় এক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তির পেরিপেক্ষিতে ওই পদে ৩১ জন চাকুরী প্রার্থী আবেদন করেন।
পরবর্তীতে গোপনে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করলে মো: মোসাদ্দেক আলী নামে এক চাকুরী প্রার্থী নিয়োগ পরিক্ষায় অসচ্ছলতা ও স্বজনপ্রীতি হওয়ার আশঙ্কায় ওই মাদ্রাসার সভাপতি সুলতান আলী চৌধুরীসহ ১৭জনকে বিবাদী করে জেলার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মোকাদ্দমা আনায়ন করে। মামলা নং ২৩৩/২০২৩। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ ছিলো।
পরে আদালত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে একটি নোটিশ দেয়। এতে বলা হয়েছে বাদিরসহ বাকি যে প্রার্থীগুলো রয়েছেন তাদের কাছে অবশ্যই প্রবেশপত্র ইস্যু করতে হবে। ইসু বলতে প্রবেশপত্র হাতে পেয়েছেন এমন নিশ্চিত করতে হবে এবং এবং সকল বৈধ প্রার্থীদের অংশগ্রহণ করে সুষ্ঠ নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়েছে।
কিন্তু আদালতের এই নির্দেশনা ভঙ্গ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অন্য প্রার্থীদের প্রবেশপত্র না দিয়ে অল্প সময়ে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ নিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেন চাকুরী প্রার্থীরা। তবে অনেকেই নিয়োগ পরীক্ষার কয়েক ঘন্টা আগে প্রবেশপত্র হাতে পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী মোসাদ্দেক আলী জানান, ভেলাজান আনছারিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আমি আবেদন করেছি। মাদ্রাসার সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটি গোপনে অবৈধ ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে গত ১৬/০৯/২৩ নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেন। আমি অধ্যক্ষের কাছে প্রবেশপত্র চাইলে তিনি বলেন পরীক্ষা হয়ে গেছে এবং ঐ পদে নিয়োগ দিয়ে দিছি। পরবর্তীতে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন।
তিনি আরো বলেন, আজ শুক্রবার বেলা ১২টায় শুনি যে ওই পদে পরীক্ষা ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে চলছে। অথচ আমার কাছে কোন ধরনের প্রবেশপত্র আসেনি। পরে আমি অধ্যক্ষের নিকট প্রবেশপত্র চাইলে তিনি জানান মামলার মাধ্যমে প্রবেশপত্র দেয়া হবে।
অন্যান্য চাকুরী প্রার্থীরা বলছেন, আমাদের না জানিয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে পরিক্ষার জন্য তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ডেকে নেয়া হয়। এতে ৮ জন প্রার্থী অংশ নেয়। বাকি ২৩ জনকে জানানো হয়নি। শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এই ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান তাঁরা।
এব্যাপারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ খোরসেদ আলম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা রাজী হননি।
মাদ্রাসার সভাপতি সুলতান আলী চৌধুরী বলেন, সকল চাকুরী প্রার্থীকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি না আসে তাহলে তো তাকে জোড় করে আনা যাবে না।
এবিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি নিয়োগ পরিক্ষার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।