ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :
কয়েক সপ্তাহ ধরে শীতে নাকাল ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ। আর এই শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন গরিব, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষেরা। শীতার্ত এসব মানুষের কথা চিন্তা করে ঘড়ির কাটা যখন রাত ১১ টা ছুই ছুই। তখন হঠাৎ করে প্রকৃত অসহায় ছিন্নমূল শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র নিয়ে হাজির হোন ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক। আর ছিন্নমূল মানুষদের গায়ে জড়িয়ে দেন কম্বল।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ১০ থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও রোড রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে শতাধিকেরও বেশি মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন তিনি। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মিথুন সরকার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও খবর পেয়ে ছুটে যান জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
কনকনে ঠান্ডায় শীতবস্ত্র পেয়ে খুশি উপকারভোগী শীতার্ত ছিন্নমূল মানুষরা। তাই তারা প্রাণ খুলে প্রার্থনা করেন সৃষ্টিকর্তার কাছে।
ঠাকুরগাঁও রোড রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে কনকনে শীতে বস্তা বিছিয়ে বসেছিলেন বৃদ্ধ ইউসুফ আলী। এসময় হঠাৎ উপস্থিত হয়ে তার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন পুলিশ সুপার। কম্বল পেয়ে তার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত ঠান্ডায় শীতবস্ত্রের অভাবে ঘুম আসতেছিল না তাই বসেছিলাম। এসময় এসপি এসে আমার গায়ে কম্বল মুড়িয়ে দেন। এখন এই কম্বল দিয়ে রাতে একটু হলেও ঘুমাতে পারবো।
একই ভাবে বসেছিলেন বৃদ্ধা সালেহা। তিনি বলেন, আমার বাড়ি ঘর নাই তাই রাতে স্টেশনে ঘুমাই। দিনে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে খাই। এভাবেই আমার দিন চলে যাই। কিন্তু আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে বর্তমানে এমন শীত যে ঠান্ডায় রাতে ভালো করে ঘুমাইতেও পারিনা। আগের একটা পুরাতন কম্বল ছিল সেটা দিয়ে শীত যাচ্ছিলনা। এখন আমাকে আরেকটা নতুন কম্বল দিল এসপি।
তিনি আরও বলেন, এতো রাতে দুরে এসে এভাবে কম্বল দিল। তাই আল্লাহ তার ভালো করুক। তার স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সকলকে দীর্ঘ হায়াত দান করুক।
বৃদ্ধ আবেদ আলী নামে এক ভিক্ষুক বলেন, রাতে এসে এসপি আমাকে একটা কম্বল দিল। এতে আমার খুব উপকার হয়েছে।
এছাড়াও ঠাকুরগাঁও বাসটার্মিনাল একালায় কম্বল বিতরণ কালে এক অসহায় শিশুর খোঁজ পান তিনি। এসময় তার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে তাকে এতিমখানায় ভর্তির দায়িত্ব নেন এসপি।
কম্বল বিতরণকালে পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, এই শীতের রাতে প্রকৃত শীর্তাতদের একটু উষ্ণতার ছোঁয়া দেওয়ার জন্য বেড় হয়েছি। আমি রাতে মাঝে মধ্যেই বেড় হয়ে যেসব জায়গায় ছিন্নমূল অসহায় মানুষরা রাতে ঘুমিয়ে থাকেন সেসব স্থানে ঘুরে ঘুরে শীতবস্ত্র প্রদান করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা মাত্র। এর আগেও এভাবে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এখনো করা হচ্ছে ও আরও করা হবে। তাই এর পাশাপাশি আপনাদের মাধ্যমে আমি এই তীব্র শীতে অসহায় মানুষদের পাশে সমাজের বিত্তবান ও ধনিক শ্রেণির মানুষদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে এবার ৫ শতাধিক মানুষের মাঝে আমরা কম্বল বিতরণ করেছি। এই কার্যক্রম আমাদের অব্যাহত আছে।