নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বাজারে ৩৫০সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল আনছে ইফাদ মোটরস। চলতি বছরের জুলাই মাসে বিশ্বখ্যাত এই ব্র্যান্ডের চারটি মডেলের মোটরসাইকেল বিক্রি করবে স্থানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে গড়ে তোলা কারখানায় বাইকটি প্রস্তুত হচ্ছে।
কি কি মডেলের রয়েল এনফিল্ড দেশের বাজারে আসছে জানতে চাইলে তাসকিন বলেন, ক্লাসিক, বুলেট, হান্টার এবং মিটিওর নামের এই চারটি মডেল স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হবে।
দামের বিষয়ে তিনি বলেন, যত কম দামে সম্ভব বাইক বিক্রির চেষ্টা থাকবে। তবে এখনই নিশ্চিত করে দাম বলা যাচ্ছে না। দেশে ডলার রেট অনেক বেড়ে গেছে। ডলারের বাজার যাচাই করে গ্রাহকদের জন্য সুবিধাজনক একটা মূল্য রাখার চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষের দিকে সড়কে ৩৭৫ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল চালানোর সরকারি অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর বাংলাদেশে বাজাজ মোটরসাইকেলের প্রস্তুতকারক উত্তরা মোটরস ২৫০ সিসি মডেলের পালসার এন ২৫০ বাজারে ছেড়েছে।
রাজপথে ৩৫০ সিসির বাইকে সুবিধা-অসুবিধা
সড়কপথে যাতায়াত সহজ ও নির্বিঘ্ন করতে দেশে তৈরি করা হচ্ছে মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এসব পথে যাতায়াতের জন্য বাইকপ্রেমীদের অন্যতম মাধ্যম মোটরসাইকেল। সদ্য উদ্বোধন হওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এখনও মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি না দেয়া হলেও, শিগগিরই এটিতেও চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে বলে আশা মোটরসাইকেল চালকদের।
তবে সড়কপথের চলমান উন্নয়নের মধ্যেই সরকার দেশে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ক্ষমতা ৩৫০ সিসি পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এতদিন ১৬৫ সিসির বেশি ইঞ্জিন সক্ষমতার মোটরসাইকেলের অনুমোদন ছিল না। ফলে ইঞ্জিন সক্ষমতা বাড়ানো মোটরসাইকেল রাস্তায় নামলে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধা থাকবে।
বাড়বে মোটরসাইকেলের পার্টস বিক্রি
উচ্চগতির মোটরসাইকেল দেশে বিক্রি শুরু হলে এসব গাড়ির পার্টসের চাহিদা বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলেন, পার্টসের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে বিক্রিও। এতে ব্যবসার পরিধি বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর বংশালের একজন মোটরপার্টস বিক্রেতা বলেন, দেশে আগেও বেশকিছু উচ্চগতির মোটরসাইকেল চলাচল করত। তবে সেগুলোর অনুমতি ছিল না। লুকিয়ে পার্টস বিক্রি করতে হতো। কিন্তু এখন অনুমতি পাওয়ায় এসব গাড়ির পার্টসের বেচাবিক্রি বাড়বে।
হেলমেট ব্যবসার পরিধি বাড়বে
মোটরসাইকেল চলাচলে অন্যতম ব্যবহৃত একটি উপকরণ হলো হেলমেট। এটি শুধু শখের বশে নয়, দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতেও ব্যবহার করেন মোটরসাইকেল চালকরা। যেহেতু দেশে উচ্চগতির মোটরসাইকেল আসছে, তাই ভালো মানের হেলমেটের চাহিদাও বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
গিয়ারএক্স বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. সাইফুল রেজা বলেন, দেশে ৩৫০ সিসি সেগমেন্টের মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। চলাচল চালু হলে বাড়বে হেলমেট ব্যবসার পরিধিও। কারণ, উচ্চগতির মোটরসাইকেল চলাচলে চালকরা উন্নতমানের ও দামি হেলমেট ব্যবহার করবে। যেগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি হলেও দুর্ঘটনার সময় জীবন বাঁচাতে অনেকটাই সহায়ক হবে।
দুর্ঘটনা বাড়ার প্রবণতা
এদিকে মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে প্রায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। মোটরসাইকেলের সিসি বাড়ানোয় এ দুর্ঘটনা আরও বাড়বে বলে মনে করেন বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে গেছে। এর পেছনে মূল কারণ চালকদের বেপরোয়া গতি। দুর্ঘটনায় অল্পবয়স্কদের মৃত্যুর হারই বেশি। এ পরিস্থিতিতে সিসি বাড়নোয় দুর্ঘটনার হার আরও বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশে হাই-স্পিডের মোটরসাইকেল চালানোর সড়ক নেই উল্লেখ করে সাইদুর রহমান আরও বলেন, দেশের সড়ক অবকাঠামো এ ধরনের উচ্চগতির মোটরসাইকেল চালানোর জন্য এখনও পুরোপুরি উপযুক্ত নয়। সিসি বাড়ানো একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
মূলত মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো দুর্ঘটনা কমানোর কথা বিবেচনা না করে বাণিজ্য বাড়ানোর দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে বলে জানান সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে অল্পবয়সি যুবকদের আকৃষ্ট করছে। আর যুবকরাও উচ্চগতির মোটরসাইকেল পেয়ে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সরকার রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে মানব জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারকে মোটরসাইকেলের সিসি নিয়ন্ত্রণ করতে আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকার রাজস্বের কথা চিন্তা করে সিসি বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছে।