জেলা প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও: সড়ক ও জনপথের জমিতে প্লাস্টিকের ঘের দিয়ে কাপড়ের দোকান, ছাউনি দিয়ে জুতা পলিশ, টেবিল বসিয়ে চা বিস্কুটের দোকান করে বছরের পর বছর ধরে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন গরীব ব্যবসায়ীরা। এতে কখনো ভাড়া গুণতে হয়নি তাদের।
কিন্তু হঠাৎ এই জায়গা দখলে নিয়ে টিন সেডের সারাসারি ৬ টি দোকান ঘর নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। আরও ৬ টি ঘর নির্মাণ হবে বলে জানান এসব ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, এসব দোকান ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
রোববার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর চৌধুরী হাট বাজারের পাশে ঠাকুরগাঁও -পঞ্চগড় মহাসড়কের পাশে দেখা যায় এমন দৃশ্য। সড়ক ও জনপথের জমিতে সারাসারি করে নতুন টিন ও কাঠ দিয়ে এসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।
ক্ষুদ্রব্যবসায়ী দেবেন বর্মন জানান, আমি যে ঘরটিতে রয়েছি সেটি ইযাসিন নামের এক ব্যক্তি বরাদ্দ নিয়েছে। তিনি আমাকে এসে আমার ছাউনি নামাতে বলেন। আমি সেটা নামিয়ে নিয়েছি৷ এখন এ ঘরে ঠাঁই নিয়ে আছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে কাপড় বিক্রি করি। হঠাৎ ঘর নির্মাণ যারা করছে তারা এসে বললো আমি যেন আমার ব্যবস্থা নেই। তাদের থেকে ঘর না নিলে হয়তো এখানে থাকতে দিবেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান সহ তার সহযোগিরা সড়কের এসব জায়গা দখল করে স্থাপনা তৈরি করেছেন।
মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথের জমি দখল করে অনেকে বিল্ডিং নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে৷ কিন্তু আমরা সমাজ সেবা করছি৷ যাতে মানুষরা সেখানে ভালো করে ব্যবসা করতে পারে৷ এ সময় তিনি ৬ টি ঘর নির্মাণের কথা স্বীকার করেছেন৷ এসব ঘর থেকে ভাড়ার বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেছেন। বিস্তারিত জানতে ফজলে রাব্বী চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
ফজলে রাব্বী চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিসের কাজে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হাট ইজারাদার সাবেক মেম্বার মিজানুর রহমান এসব ঘর তুলেছেন। এটি সমাজসেবা মূলক কাজ নাকি দখল জানতে চাইলে তিনি দখলের কথা বলেন।
পরবর্তীতে আবারও সাবেক মেম্বার মিজানুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সবাই যেভাবে সড়কের জমি দখল করে দোকান ঘর করেছেন আমরাও তাই করেছি। সড়ক ও জনপথের কোন আছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। এসময় তিনি সড়কের দুই পাশে এসব স্থাপনা উচ্ছেদেরও কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার যদি সব উচ্ছেদ করে দেয় তাহলে দিতে পারে।
তবে স্থানীয় সচেতন মানুষের দাবি, সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় যেসব গরীব মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তাদের উপর যেন জুলুম কেউ না চালান। কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি যেন সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা না করতে পারেন এবং সেগুলো যেন উচ্ছেদ করা হয়। তারা বলেন, সমাজ সেবার আড়ালে কারো অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিনা তারও তদন্ত চান তারা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয়রা আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেছেন আমরা মাপজোখ করে শিঘ্রই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।