একটি ছবি ও হাজারো কান্নার বাণী

শেয়ার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ছোট্ট সন্তানের কপালে চুমু খাচ্ছেন বাবা- এমন ছবি স্বাভাবিকই মনে হতে পারে। কিন্তু আড়াই বছরের শিশু রাহিম উদ্দিন মোল্লাকে তার বাবা মো. সালাউদ্দিন মোল্লার চুমু খাওয়ার ছবিটি বলছে ভিন্ন কথা। ছবি যেন হাজারো কান্নার বাণী হয়ে দৃশ্যমান হয়ে আছে। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ ভাইরাল হয়েছে।

হৃদয় ছুঁয়েছে অসংখ্য মানুষের। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অনেকেই লিখেছেন মর্মস্পর্শী কথা।

শিশু রাহিম বাবাকে দেখেছে দেড় মাসেরও বেশি সময় পর। বাবাকে দেখা মাত্রই মায়ের কোল থেকে নেমে সে ছুটে গেল বাবার কাছে।

সাধ আছে কিন্তু কোলে নেওয়ার সাধ্য নেই বাবা সালাউদ্দিন মোল্লার। লোহার শিকের ফাঁক গলিয়ে রাহিমের কপালে চুম আঁকলেন তিনি। দূর থেকে কেউ একজন সেই ছবি তুলে সাক্ষী হলেন বাবা-ছেলের এই হৃদয়স্পর্শ করা ভালোবাসার। ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার।

সালাউদ্দিন মোল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব। গত ২৮ অক্টোবর থেকে জেলা কারাগারে বন্দি আছেন তিনি। মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে এসেছিলেন হাজিরা দিতে। সেখানেই বাবা-ছেলের এমন মিলন হয়।

শিশু রাহিম যেমন জানে না আদালতের কাঠগড়ায় এমনটি করতে নেই তেমনিভাবে বাবা সালাউদ্দিনের কাছে যেন আবেগটাই বড়।বাবা-ছেলের এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ভাইরাল। ছবিটিকে নিয়ে অনেকেই আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

‘হৃদয় বিদারক দৃশ্য। অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই কষ্টের ফলাফল নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা খুব শিগগিরই দেখাবেন। মোল্লা সালাউদ্দিন ভাই তাঁর সন্তানকে কাছে পেয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। ভাইয়ের এই করুণ পরিণতি দেখে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হবে।’- ছবিটি দিয়ে ফেসবুকে এভাবেই লিখেছেন জেলার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ।

ইকবাল হাসান নামে একজন লিখেছেন, ‘কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত। কত ব্যথা বুকে চাপালে তাকে আমি বলি ধৈর্য্য…। নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ। দৃশ্যটা হৃদয় বিদারক। দীর্ঘদিন ধরে বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত। প্রিয় সন্তানকে কাছে পেয়ে আদর করছেন কারাবন্দি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ও মৃত্যুঞ্জয়ী সাবেক ছাত্র নেতা প্রিয় সালাউদ্দিন মোল্লা ভাই।’

‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারি না চিৎকার…। বুকের ব্যথা চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।’ লিখেছেন সিরাজুল ইসলাম রিপন নামে একজন। সায়েম মোহাম্মদ নামে একজন লিখেছেন, ‘ছবির ভাষা যখন ফুটে ওঠে তখন কোনো কিছু বলে বা লিখে বোঝাতে হয় না।’

আজ বুধবার রাতে এ নিয়ে কথা হয় মো. সালাউদ্দিন মোল্লার স্ত্রী আফাসানা হোসেনের সঙ্গে। কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ছবিটি কে তুলেছে আমার জানা নেই। তবে ছবিটি দেখে মনে হয়েছে অনেক দূর থেকে তোলা। ফেসবুকে ছবিটি দেখে আমি অবাক হয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিয়ে আসার পরই রাজনৈতিক মামলায় তিনি (সালাউদ্দিন) গ্রেপ্তার হন। রাহিমের বাবা প্রায়ই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলতেন। এর আগে আর কখনো রাহিমকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়নি। আমি আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার সময় রাহিম তার বাবাকে ভেতরে দেখে দৌঁড়ে চলে যায়। তখন রাহিমকে তার বাবা আদর করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

website counter