নিজস্ব প্রতিবেদক : ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বিজয় দিবসের দিনেও জাতীয় পতাকা তোলা হয়নি উপজেলা নির্বাচন অফিস ভবনে।
মহান বিজয় দিবসে সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হয়নি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ সরকারি অফিসেই উত্তোলন করা হয়নি জাতীয় পতাকা। উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ। অনেকে বলছেন, জাতীয় দিবসে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন না করা জাতীয় পতাকা অবমাননার শামিল। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন, বিষয়টি তার জানা নাই। খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন তিনি।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, সমাজসেবা অফিস ও আনসার ভিডিপি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলেও উপজেলা শিক্ষা অফিস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, পরিসংখ্যান অফিস, কৃষি অফিস, খাদ্য অফিস, মৎস্য অফিস, সমবায় অফিস, পল্লী উন্নয়ন অফিস, নির্বাচন অফিস, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কার্যালয়সহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সহ তার বাসভবনে আলোকসজ্জা করা হলেও তার বাসভবনে টাঙানো হয়নি জাতীয় পতাকা। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পীরগঞ্জ কটন ইউনিট অফিসারের কার্যালয়ের সামনে একটি ছোট পাইপের মাথায় দায়সারাভাবে পতাকা টাঙানো হয়েছে। এ ছাড়াও পীরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১১টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষককে ফোন করার পর অবশ্য পতাকা টাঙানো হয়। মডেল স্কুলের মতো বিজিবি স্কুলসহ আরও বেশকিছু স্কুলে জাতীয় পতাকা তোলা হয়নি বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলেও যমুনা ব্যাংক উপশাখা কার্যালয়সহ শহরের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি।
এ বিষয়ে অঙ্গীকার নাট্য নিকেতনের সভাপতি নাট্যকার গৌতম দাস বাবলু বলেন, এটি চেতনার বিষয়। বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা মানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি অবজ্ঞা করা। উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এ রকম হচ্ছে।
এ বিষয়ে অঙ্গীকার নাট্য নিকেতনের সভাপতি নাট্যকার গৌতম দাস বাবলু বলেন, এটি চেতনার বিষয়। বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা মানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি অবজ্ঞা করা। উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এ রকম হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আবু সায়েম বলেন, বিধি মোতাবেক পতাকা উত্তোলন না করা জাতীয় পতাকা অবমাননার শামিল। ২০১০ সালে সংশোধিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন আইন অনুযায়ী জাতীয় পতাকা অবমাননায় সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নাই।
সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলেন, বিজয় দিবসে সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা তোলা হয় না, এটা ভাবা যায়! বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উদীচীর সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাবুল বলেন, দেশে আইন আছে প্রয়োগ নেই। বিজয় দিবসে সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি এটা মেনে নেওয়া যায় না।
অভিযোগ বিষয়ে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারুল বেগম বলেন, তিনি ঢাকায় আছেন। স্কুলের দপ্তরিকে পতাকা টাঙাতে বলেছিলেন। সে সময় মতো টাঙায়নি। এটা একটু ভুল হয়ে গেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন। আমাদের আলাদা করে পতাকা উত্তোলন করতে হবে কেন? তবে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সময়মতো জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার বিষয়টি ভুল হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। এ বিষয়ে যমুনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম বলেন, সরকারি দপ্তরগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় কিনা- এটা তার জানা নাই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। তার বাসভবনে পতাকা উত্তোলন না করা বিষয়ে তিনি বলেন, দু’দিন হলো তিনি এ উপজেলায় এসেছেন। তাই সবকিছু ঠিক করতে পারেননি। আগামীতে বিষয়গুলো দেখা হবে।